কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই নানান সমস্যায় পড়ে থাকি। অনেকে আছি যারা কিছু চিন্তা না করেই হয়তো কিনে ফেলি এবং পরবর্তীতে নানান সমস্যায় পড়ে যাই। তাই আসুন আমরা আজ দেখে নেই একটি ভালো কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে আমাদের কি কি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
নিচে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস বর্ণনা করা হল:
কেন কিনতে চাচ্ছেন?
– আপনি কি কারণে একটি কম্পিউটার কিনতে চাচ্ছেন তা ভেবে দেখুন। আপনি ইন্টারনেট ও ডকুমেন্ট এর কাজের জন্য চাইছেন? আপনি কি গেম খেলাবার জন্য পি.সি. কিনতে চাইছেন? অথবা গ্রাফিক্স ও ভিডিও এডিটিং এর কাজের জন্য কিনতে চাইছেন?
সঠিক কনফিগারেশনটি বেছে নিন যেন তা আপনার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে।
– আমরা অনেকেই আছি যারা শুধু নর্মাল কাজ করবার জন্য পি.সি. কিনে থাকি। সে ক্ষেত্রে দাম দিয়ে ভালো কনফিগারেশনের পি.সি.-র প্রয়োজন কিন্তু নেই। আবার আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই দুর্বল কনফিগারেশনের পি.সি. আপনার জন্য নয়। তাই আগে একটু ভেবে দেখুন আপনি কোন কনফিগারেশনের পিসিটি চাইছেন।
প্রকারভেদ:
- Value Line Computers: এ ধরণের কম্পিউটার গুলো ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ওয়ার্ড প্রোসেসিং, মেইল চেকিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো। কিছু নামী কোম্পানি যেমন- Dell, HP, Getway স্বল্প মূল্যে এধরনের কম্পিউটার বাজারজাত করে থাকে।
- Enthusiastic line computers: এ ধরণের পিসি গুলো সাধারণত গেমিং, ভিডিও ইডিটিং ও গ্রাফিক্সের কাজের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট! যে কোন ভালো ব্র্যান্ড এর যেমন- HP, Dell, Compac, Acer এধরনের পিসি তৈরি করে থাকে। তবে এগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত একটু বেশী।
- Gaming line computers:- আপনি যদি রেগুলার গেমার হয়ে থাকেন তবে এটি হবে আপনার জন্য পারফেক্ট সল্যুশন। HP ব্র্যান্ডের XPS Line, Alienware মডেলের পিসি গুলো একটু দেখে নিতে পারেন। তবে আপনি যদি আর ভালো কিছু আশা করে থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে টিপস হচ্ছে নিজের মতন করে পিসি কনফিগার করে নেয়া। এতে করে আপনি আপনার নিজের ইচ্ছা মতন হার্ডওয়ার লাগিয়ে কিংবা পরবর্তীতে চেঞ্জ করে পিসির ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
এবার চলুন কম্পিউটার বাজারের দিকে চোখ ফেরানো যাক। পিসি কেনার আগে অবশ্যই বাজার যাচাই করে নিন। কেননা দর দামের হেরফের হতেই থাকে কম্পিউটারের বাজারে। আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনার জন্য সঠিক পিসি-টি বেছে নিন। ছোট্ট আরেকটি টিপস দেই। আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন তবে আপনাকে ভালো পারফর্মেন্স পাবার জন্য অবশ্যই গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে একদম লেটেস্ট মডেলের গ্রাফিক্স কার্ড না কিনে ঠিক এর আগের মডেলটি কিনতে পারেন। এতে করে দাম কিছুটা কম পরবে, আর অবশ্যই আপনি পাবেন সঠিক মানের গ্রাফিক্স এর স্বাদ।
এছাড়া আপনি কেনার আগে আপনার বন্ধুদের অথবা পরিচিতদের জিজ্ঞেস করে নিন তারা এমন পিসি ইউজ করেছেন কিনা, আর করে থাকলে কেমন সেবা দিচ্ছে। আর খরচ বাঁচাবার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে যদি কিনা আপনি সকল কম্পোনেন্ট গুলো আলাদা ভাবে কিনে নিজে কনফিগার করে নিতে পারেন।
এখন চলুন হার্ডওয়্যারের বিষয় গুলো জেনে নেই-
- Compatibility Check: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে বারবার আপনার প্রয়োজনটি নিজে অনুধাবন করে নিয়ে সঠিক কম্পোনেন্ট গুলো বেছে নেয়া। আপনি আপনার কাজের জন্য যে মাদারবোর্ড চাইছেন তার উপযোগী প্রসেসরটি আপনাকে বেছে নিতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি Intel DG41 RQ সিরিজের মাদারবোর্ড কিনবেন। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে এই বোর্ডের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ প্রসেসরটাই কিনতে হবে। এক্ষেত্রে কোর-টু ডুয়ো প্রসেসর হচ্ছে সঠিক মান। আপনি এই মাদার বোর্ডে কোর আই সিরিজের প্রসেসর ব্যবহার করতে পারবেন না। এই কথাগুলো অন্যান্য হার্ডওয়্যার বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
- Motherboard: ঝামেলা এবার জন্য বাজারের সর্বশেষ ভার্সনের মাদারবোর্ড টি কিনুন। কেননা পরবর্তীতে এই মাদারবোর্ড রেখেই আপনি আপনার পিসি টি আপগ্রেড করে নিতে পারবেন। যেমন Intel DG41 RQ এর ক্ষেত্রে আপনি র্যাম পরিবর্তন করতে গেলে আপনাকে DDR2 মডেলের র্যাম দিয়েই আপগ্রেড হবে। এছাড়া বাজারে বর্তমানে 3rd জেনারেশনের মাদারবোর্ড পাওয়া যাচ্ছে যা লেটেস্ট ভার্শন। তাই ভেবে দেখুন আপনি কোন জেনারেশনের মাদারবোর্ডটি বেছে নেবেন। এ ক্ষেত্রে পরবর্তীতে এর সেবা প্রাপ্যতা অগ্রগণ্য।
- Processor: বাজারে তিন ধরণের প্রসেসর পাওয়া যায়। AMD, Intel, Celeron. আপনার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বেছে নিন। সাধারণ ব্রাউজিং, ওয়ার্ড প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে আপনি সেলেরন প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন। গেমিং, গ্রাফিক্স, ভিডিও এডিটিং এর জন্য AMD কিংবা Intel এর কোর আই সিরিজের প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া মাঝারি মানের ক্ষেত্রে ডুয়েল-কোর, কিংবা কোর-টু-ডুয়ো প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন।
- RAM: র্যাম আপনার পছন্দের মাদারবোর্ডের উপর নির্ভরশীল। মাদারবোর্ড ভেদে আপনাকে DDR2 কিংবা DDR3 মডেলের র্যাম ব্যবহার করতে হতে পারে। তবে বর্তমানে নতুন ভার্শনের সকল মাদারবোর্ড DDR3 র্যাম সাপোর্ট করে।
- HDD: হার্ডডিস্ক এর ক্ষেত্রে গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। SATA মডেলের হার্ডডিস্ক ব্যবহার করতে পারেন ভালো গতি পাবার জন্য।এই ক্ষেত্রে হার্ডডিস্কের rpm দেখে নেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
- Power Supply: দীর্ঘ দিন পিসি ব্যবহার, দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার ও অনাকাঙ্ক্ষিত বৈদ্যুতিক সমস্যা এড়াবার জন্য অবশ্যই ভালো মানের, সঠিক ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাই বেছে নেয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাঝারি মানের ও সহজ কাজ এর পিসি গুলোর জন্য ৪৫০ ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাইয়ার যথেষ্ট। গ্রাফিক্স কার্ড থেকে থাকলে কিংবা গ্রাফিক্স বা ভিডিও এডিটিং এজন্য আলাদা হার্ডওয়ার থাকলে অবশ্যই আপনাকে ৪৫০ ওয়াটের বেশী পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়া আপনার ব্যবহারের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে আরো কিছু কিনতে হতে পারে। যেমন গ্রাফিক্স কার্ড, ভালো মানের সাউন্ড-কার্ড, কিংবা ওয়্যারলেস ল্যান কার্ড। আর কি-বোর্ড, মাউস তো রয়েছেই।
তো আর দেরী কেন? খুঁজে নিন পছন্দের পিসি! আর হ্যাঁ, যখন কোন লেটেস্ট মডেল বাজারে আসে তখন এর আগের মডেল গুলর দাম অনেকটাই কমে যায়। এই সুবিধা নিতে অবশ্যই ভুল করবেন না।
সবাই ভালো থাকুন। সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ভাই আমি যখন কম্পিউটার কিনতে যাব তখন আপনাকে নিয়ে যেতে চাই। দয়া করে আপনার মেবাইল নাম্বারটা দিন। আমারটা ০১৯৪২০১৬১৬৭